নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা নবীজীর দুইটি নাম উল্লেখ করেছেন।
১. মুহাম্মদ
২. আহমদ
মুহাম্মদ নামটি কুরআনের চার জায়গায় উল্লেখ আছে।
ক) সূরা আলে ইমরান- وَمَامُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ (আয়াত: ১৪৪)
খ) সূরা আহযাব- مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ  (আয়াত: ৪০)
গ) সূরা মুহাম্মদ-وَالَّذِينَآمَنُواوَعَمِلُواالصَّالِحَاتِوَآمَنُوابِمَانُزِّلَعَلَىمُحَمَّدٍ (আয়াত: ২)
ঘ) সূরা ফাতাহ- مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ (আয়াত: ২৯)
আর আহমদ নামটি কুরআনে কারীমের এক জায়গায় উল্লেখ রয়েছে। সূরা সাফ- (আয়াত: ৭) ইরশাদ হয়েছে,
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ
হাদীসের বর্ণনায় নবীজীর পাঁচটি নাম রয়েছে। বুখারী এবং মুসলিম এর বর্ণনায় রয়েছে, হযরত জুবায়ের ইবনে মুতয়ীম রাযি. বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার পাঁচটি নাম রয়েছে। ১. মুহাম্মদ ২. আহমদ। ৩. মাহী। ৪. হাশের। ৫. আকেব। অন্যান্য বর্ণনায় আরো কিছু নাম পাওয়া যায়, যথা নাবীউত তাওবা। নাবীউর রহমাহ। আল মুকাফ্ফী। নবীউল মালাহিম।
নামের মর্মার্থ:‘মুহাম্মদ’ ও ‘আহমদ’ নামের বুৎপত্তি হয়েছে ‘হামদ’ শব্দ হতে। আর হামদ শব্দের অর্থ হচ্ছে, কারো উত্তম আখলাক বা চরিত্র, প্রশংসনীয় গুণাবলী, পরিপূর্ণ সৌন্দর্য ও মাহাত্মকে ভক্তি ভালবাসা ও মর্যাদা ও সম্ভ্রমের সাথে বর্ণনা করা হলো হামদ।
সুতরাং মুহাম্মদ এর মর্ম হলো, সেই পূণ্যময় সত্তা- যার প্রতিটি কামালাত, ব্যক্তিগত গুণাবলী এবং আমল প্রশংসনীয়। উক্ত গুণাবলীকে ভক্তি ও ভালবাসার সাথে খুব বেশি ও পুনঃ পুনঃ বর্ণনা করা হয়। তাই আল্লাহ তাআলার ইশারায় তাঁর নাম রাখা হয় ‘মুহাম্মদ’ নামে।
আর আহমদ নামের একটি মর্ম হচ্ছে, সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহ তাআলার হামদ বা প্রশংসাকারী। আর এ কথা সর্বোজন বিধিত যে,আমাদের নবীজীই আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক প্রশংসাকারী। (সীরাতে মুস্তফা ১/৬৩,৬৪)

নাম রাখার প্রেক্ষাপট: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর আকীকা করেন,সই সাথে সকল কুরাইশের দাওয়াত করেন এবং তাঁর নাম রাখেন মুহাম্মদ। এ নাম শুনে কুরাইশা তখন বলল, হে আবুল হারিস! এই নামটি আপনি কীভাবে নির্বাচন করলেন? যে নাম আপনার পূর্বপুরুষ কিংবা আপনার সম্প্রদায়ের কেউ কোনোদিন রাখেনি। তখন আবদুল মুত্তালিব বললেন, এই নাম আমি এ জন্য রেখেছি যে, যাতে আল্লাহ তাআলার সকল সৃষ্টিজীব এই নবজাতকের প্রশংসা করে। দাদা আবদুল মুত্তালিব নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মের পূর্বে একটি স্বপ্ন দেখেন, যা তাঁর এই নাম রাখার কারণ ছিল।
এছাড়াও নবীজীর মাতা হযরত আমেনাকে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে এটা বলা হয়েছিল যে, তুমি সৃষ্টির সেরা, উত্তম চরিত্রের অধিকারী, জাতির নেতাকে গর্ভে ধারণ করেছো। তাঁর নাম রাখবে মুহাম্মদ।

গুণবাচক নাম: কুরআন, হাদীস, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব এবং সীরাত গ্রন্থসমূহে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক নাম পাওয়া যায়, যার সংখ্যা ৯৯ ও ১২০ ইত্যাদির বর্ণনা পাওয়া যায়। এগুলো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলম তথা নাম হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্নমত রয়েছে, তবে সেগুলো গুণবাচক নাম ধরা হলে বিশেষ কোনো সমস্যা বা দ্বিমত হয়না। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো অবশ্যই সকল গুণের আধার ছিলেন। গুণবাচক নামের মাঝে লুকায়িত গুণগুলো তার মাঝে পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান ছিলো। তাহা, ইয়াসিন, মুজ্জাম্মিল, মুদ্দাসসির, রাহমাতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যিন ইত্যাদি গুণবাচক নামের অন্তরভুক্ত।

উপনাম: নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সবচেয়ে বড় প্রসিদ্ধ ও প্রচারিত উপনাম ছিলো আবুল কাসেম, যা তার জৈষ্ঠ পুত্র কাসেমের নামানুসারে প্রসিদ্ধ ছিল। দ্বিতীয় উপনাম আবু ইবরাহীম।
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন মারিয়া কিবতিয়া রাযি- এর গর্ভ থেকে ইবরাহীম জন্ম গ্রহণ করেন,তখন জিবরাইল আ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাজির হয়ে বলেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আবা ইবরাহীম। হে ইবরাহীমের পিতা! আপনার প্রতি সালাম। (মুসতাদরাকে হাকেম ২/৬০৪)
তাই আবু ইবরাহীমও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপনাম ছিল।

About the author