অন্তিম লগ্ন

প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করার দিনটিতে সাহাবীগণ ফজরের নামাযে দাঁড়িয়েছেন। সকল প্রকার বাতিল মাবুদের গােলকধাঁধা থেকে আল্লাহর বান্দাদেরকে উদ্ধার করে এক রাব্বল আলামিনের সামনে কাতারবন্দি করার জন্যেই তাে ছিল প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীর্ঘ তেইশ বছরের কঠোর সাধনা। হ্যা, আজ আল্লাহর বান্দারা মহান আল্লাহকে চিনতে পেরেছে। সফল হয়েছে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-সাধনা।

জীবনসায়াহ্নে এ সাফল্যের দৃশ্য শেষবারের মতাে পরিতৃপ্ত দৃষ্টিতে দেখবার আকুতি নিয়েই হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার কুটিরের পর্দা সরিয়ে দেওয়ার জন্যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন। দৃষ্টির সামনেই ছিল নামাযের কাতার। এ দৃশ্য দেখে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুগ্ণক্লিষ্ট পবিত্র মুখে তৃপ্তি ও আনন্দের যে অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছিল, বিভিন্ন প্রামাণ্য কিতাবের পাতায়, সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনার মধ্যে পবিত্র দৃশ্য এখনও বিধৃত হয়ে রয়েছে। বুখারী শরীফের আযান অধ্যায়ে উদ্ধৃত হযরত আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় রয়েছে, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চেহারা আমাদের দৃষ্টিপথে এমনভাবে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল, যেন পাক কুরআনের খােলা পাতা। আমাদের দেখে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃদু হাসলেন। পরম তৃপ্তির হাসি। মনে হচ্ছি এ হাসির ছটায় আমাদের নামায বুঝিবা ছুটে যায়। আনাস

রাযিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেন, তিন দিন থেকে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাইরে আসা বন্ধ ছিল। সাহাবীগণ নামাযে আসতেন। মসজিদে যথারীতি নামায হতাে। কিন্তু মেহরাব ও মিম্বরে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে না দেখে সবাই হতাশ হয়ে ফিরে যেতেন। চতুর্থ দিনে ফজরের জামাত শুরু হয়েছিল। এমন সময় হঠাৎ হুজরার পর্দা সরে গেল। কারও কারও দৃষ্টিপথে হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চেহারা উদ্ভাসিত হলাে। এটাই ছিল শেষ দেখা। এরপর আর সেই মােবারক চেহারা কেউ দেখতে পাননি। সেদিনই দ্বিপ্রহরের শেষ মুহূর্তে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিরবিদায় গ্রহণ করেন।

About the author