সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর, সুঠাম, সর্বোত্তম দেহাবয়ববিশিষ্ট ছিলেন আল্লাহর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাইতে সুদর্শন কোনাে পুরুষ আমি জীবনে দেখিনি। তাঁর পবিত্র চেহারার মধ্যে যেন দ্বিপ্রহরের সূর্য সন্তরণ করতে থাকত। হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, জীবদ্দশাতে তাে বটেই, হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পরও তাঁর মতাে সুপুরুষ আমি আর কখনাে দেখিনি।
আল্লাহ তাআলার সর্বাপেক্ষা প্রিয় বান্দা তাঁর মনােনীত নবী-রাসূলগণ। আল্লাহর এ প্রিয় বান্দাগণের মধ্যে অনন্য ছিলেন আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ মােস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, দৈহিক সৌষ্ঠব এবং চরিত্রমাধুরী, এ উভয় দিক বিচারেই নবী-রাসূলগণকে আল্লাহ সৃষ্টির সেরা নমুনারূপে তৈরি করেছেন; তেমনি তাদের কণ্ঠস্বরও আল্লাহ পাক স্বতন্ত্র মাধুর্যমণ্ডিত করেছেন।
সাহাবী হযরত কাতাদাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোত্তম দেহাবয়ব এবং সে সঙ্গে সর্বাপেক্ষা মধুর কণ্ঠস্বর দান করেছিলেন। তাঁর আগে বা পরে তাঁর তুল্য আর কেউ ছিলেন না।
মক্কার একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন ওরাকা ইবনে নওফেল। ইনি ছিলেন উম্মত-জননী হযরত খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহুর চাচাতাে ভাই এবং মুরব্বি। হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অঙ্গসৌষ্ঠব সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, দ্বাদশীর চাঁদের মতাে তার মুখমণ্ডল। ললাটদেশ থেকে যেন সৌভাগ্যের আলােকরশ্মি ঠিকরে পড়ছে। গভীর কালাে মায়াময় দুটি চোখ। তাঁর পবিত্র বদনের গন্ধ করিকেও হার মানায়। তার কণ্ঠস্বর অপূর্ব। তিনি চলতে শুরু করলে মনে হয় চতুর্দশীর চাদ যেন নড়াচড়া করছে। রহমতের বারিধারা যেন আসন্ন হয়ে এসেছে। শারীরিক সৌন্দর্য এবং মহােত্তম গুণে যেমন তিনি অনন্য, তেমনি বংশমর্যাদায়ও অসাধারণ। তার চরিত্রের সাথে তুলনা করার মতাে আর কোনাে ব্যক্তিত্ব জন্মগ্রহণই করেনি এ বিশ্বচরাচরে। ভ্রমর-কালাে জুলফির ভেতর থেকে তার গােলাপি দু’টি গণ্ডদেশ যেন বিদ্যুৎ ছড়ায়। তাঁর মুখের কথায় মুক্তা ঝরে। তাঁর পবিত্র শরীর মেশক-আম্বরের গন্ধ ছড়ায়।
সাহাবী হযরত জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনাে পথ দিয়ে গেলে বহুক্ষণ পর্যন্ত সে পথে মনমাতানাে সুগন্ধ ছড়িয়ে থাকত। শুধু গন্ধ অনুসরণ করেই তাঁকে খুঁজে বের করতে অসুবিধা হতাে না।
সাহাবী হযরত কাব ইবনে মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুশি হতেন, তখন তাঁর পবিত্র চেহারা এমন উজ্জ্বল হয়ে উঠত, যেমন নীল আকাশে পূর্ণ চন্দ্র হাসতে থাকে।
ইসলামের কবি হযরত হাসসান ইবনে সাবেত রাযিয়াল্লাহু আনহু প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চেহারার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন-
وأحسن منك لم تر فط عيني * وأجمل منك مثير النساء
خلقت مبرأ من كل عيب* كأنك قد خلقت كما تشاء
আপনার মতাে সুন্দর কোনাে মানুষ আর কখনো দেখেনি আমার চোখ।
আপনার চাইতে সুশ্রী কোনাে সন্তান কোনো মা কখনো প্রসব করেনি। কোনাে ক্রটিই আপনাকে স্পর্শ করতে পারেনি। যেমনটি আপনি চেয়েছিলেন, তেমনি করেই বুঝি সৃষ্টি করা হয়েছে আপনাকে!
তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল সূর্যের সাথে তুল্য। অপর দিকে আপন-পর সবার মধ্যেই তিনি নির্মল চাঁদের সিগ্ধতা বিতরণ করতেন। এদিক লক্ষ করেই সম্ভবত কোনাে কোনাে কবি তাঁর পবিত্র চেহারাকে সূর্যের প্রখরতার সাথে, আর কেউ কেউ পূর্ণ চন্দ্রের গ্ধি আলাের সাথে তুলনা করেছেন।
সাহাবী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রাযিয়াল্লাহু আনহুর পৌত্র আবু উবায়দা ইবনে মুহাম্মদ বর্ণনা করেছিলেন, হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চেহারা কেমন ছিল? তিনি বলেছিলেন, বৎস, তাঁর পবিত্র চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করলে এরূপ অনুভূত হতাে, যেন সূর্য উদিত হচ্ছে—অর্থাৎ, তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রখরতা সূর্যের সাথে তুল্য ছিল। সার্বক্ষণিক সেবক সাহাবী হযরত আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গাত্রবর্ণে এক ধরনের মনােমুগ্ধকর ঔজ্জ্বল্য ছিল। তাঁর ঘামের ফোটা ছিল মুক্তার মতাে শুদ্র। পথ চলার সময় সামনের দিকে ঈষৎ ঝুঁকে চলতেন। তাঁর হাতের তালু ছিল রেশমের চাইতেও মসৃণ। তার গায়ের সুগন্ধ ছিল কস্তুরির চাইতেও অনেক বেশি মনােমুগ্ধকর।