যে ছবি যায় না আঁকা

বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী এবং মুসনাদে আহমদ কিতাবের ‘আখলাক ও ‘শামায়েল’ সম্পর্কিত বর্ণনাগুলাে একত্র করলে দেখা যায়, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র অবয়ব ছিল অপূর্ব কান্তিময়। আকুতি ছিল মধ্যম, বর্ণ দুধে-আলতায়। ললাট ছিল প্রশস্ত, মাথা শ্রেষ্ঠ ও বৃহৎ, গ্রীৰা উন্নত, ঈগল-চঞ্চুর মতাে নাসিকা, ডাগর মায়াবি চোথ এবং ভুরু-জোড়া একত্রে সন্নিবেশিত। হৃদয়হরা দুটো চোখের মণি ছিল গাঢ় কৃষ্ণবর্ণের। সুগঠিত ভরাট চোয়াল এবং ওপরে নিচে সামান্য লম্বাকৃতির মুখমণ্ডলে ঘনকৃষ্ণ বর্ণের শত্রুরাজি অপূর্ব শােভা বিতরণ করত। ওজোড়া ছিল গােলাপ-পাপড়ির মতাে। হঠাৎ দেখলে মনে হতাে, যেন দুঠোটে খুৰ যত্নের সাথে এক পোঁচ গােলাপি রঙ বুলিয়ে রাখা হয়েছে। অনুপম দুওষ্ঠের ফাকে সুগঠিত দাঁতের পাটি মুক্তোর ন্যায় জ্বলজ্বল করত।

মাথার চুল ছিল সামান্য কোঁকড়ানাে ও ঘন কৃষ্ণবর্ণ। শেষ বিদায়ের সময় এই চুলে এবং শুতে সামান্য পাক ধরেছিল। দুচোখের ভুরু ছিল অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ। বক্ষদেশ ছিল প্রশস্ত এবং জাতির মধ্যস্থল হতে নাভিমূল পর্যন্ত হালকা রেশমের মতাে চুলের রেখা প্রলম্বিত ছিল। দুবাহু ছিল মাংসল, সুগঠিত এবং সাধারণ মানুষের তুলনায় একটু বেশি লম্বা, জানু পর্যন্ত প্রলম্বিত। মসৃণ তুকবিশিষ্ট শরীরের কোথাও মেদের বাহুল্য দৃষ্টিগােচর হতাে না। পায়ের গােছা ছিল সুগঠিত এবং পাতা সামান্য বাঁকানাে।

কোথাও দাঁড়ালে মনে হতাে যেন শিল্পীর হাতে গড়া একটি মনােরম প্রতিকৃতি দাঁড়িয়ে আছে। হেঁটে যাবার সময় সােজাভাবে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে চলতেন, দেখলে মনে হতাে, যেন অপেক্ষাকৃত উঁচু ভূমি হতে নিচের দিকে নেমে আসছেন।

অতুলনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ন্যায় তাঁর বাহ্যিক অবয়বও এত কান্তিময়, ব্যক্তিত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় ছিল যে, দর্শকমাত্রই অভিভূত হয়ে পড়ত। সাহাবীগণ নানাভাবে এই অতুল কান্তির বর্ণনা পেশ করেছেন।

অনেক লােক শুধু একবার এই অতুলনীয় চেহাৱা দর্শন করেই আত্মহারা হয়েছেন।

মদীনার বিশিষ্ট ইহুদি পণ্ডিত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম মহানবীর পবিত্র চেহারা দেখেই বলে উঠেছিলেন, আল্লাহর শপথ, এ চেহারা কোনাে কপট মিথ্যাবাদীর হতে পারে না।-বুখারী

জাবির ইবনে সামুরা নামের জনৈক সাহাবীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তার চেহারা কি খােলা তরবারির মতাে ঝলমল করত? তিনি জবাব দিয়েছিলেন, না, পূর্ণ চাদের মতাে চমকাত। আমি মেঘের লেশচিহ্নহীন এক পূর্ণিমার রাতে একবার পূর্ণ চাদের দিকে আর একবার প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা মােবারকের দিকে চেয়ে দেখছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল, তার পবিত্র চেহারার তুলনায় আকাশের পূর্ণ চন্দ্র যেন অনেকটা দীপ্তিহীন, নিষ্প্রভ।-শামায়েলে তিরমিযী

হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা অধিক সুশ্রী কাউকে দেখিনি। তার কপােলে যেন সূর্য সন্তরণ করতে থাকত। তিনি যখন মুচকি হাসতেন, তখন প্রাচীর গাত্রেও যেন তার চমক প্রতিবিম্বিত হতাে।-মাদারিজুন নবুওয়াত হিন্দ ইবনে আবি হালা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, দর্শকদের দৃষ্টিতে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখমণ্ডল মহান মুরব্বির চেহারা এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বলে অভিহিত হতাে। তার মুখমণ্ডল পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় ঝলমল করত।

About the author