তিনি মেহমানদের সাথে গল্প করতেন

নবীজি(সা) মেহমানদের সাথে গল্প করতেন, তাদের মেহমানদারি করতে ভালোবাসতেনঃ

নবীজির(সা) আজাদক্রীত দাস সাওবান(রা) বলেন, একবার আমাদের বাড়িতে এক বেদুঈন মেহমান এলেন। নবীজী (সা) তাকে নিয়ে বাড়ির সামনে বসলেন। তারপর নবীজী(সা) তাকে লোকদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন যে, ইসলামে এসে তারা কেমন খুশি, সালাতের সাথে তাদের কেমন সখ্যতা গড়ে উঠেছে? মেহমান তাকে প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলেন। এতে নবীজির চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখলাম।
তারপর যখন বেলা বেড়ে খাবারের সময় হল, তখন নবীজি (সা) আমাকে ডেকে চুপিচুপি বললেন, আয়েশার (রা) ঘরে যাও তাকে বল যে, রাসুলের (সা) একজন মেহমান আছে। আয়েশা(রা) বললেন, সে সত্তা শপত– যিনি হেদায়াত ও সত্য দ্বীন প্রেরণ করেছেন, আমাদের ঘরে মানুষের খাওয়ার মত কিছুই নেই।

এরপর নবীজি আমাকে এক এক করে সকল স্ত্রীর কাছে পাঠালেন। কিন্তু সকলেই আয়েশার মত ওজর পেশ করলেন। এতে নবীজির(সা) চেহারা মলিন হয়ে উঠতে দেখলাম।

বেদুইন বুদ্ধিমান ছিলেন তিনি বুদ্ধি খাটিয়ে কথার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে বললেন, এযুগের বেদুইনরা কষ্ট সহ্য করতে পারে বেশ আমরা শহর বাসীর মত নই। একটি খেজুর ও একটু দুধ হলেই আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।

তখন সামনে দিয়ে সদ্য দুধ দোহন কৃত আমাদের একটি ছাগী হেঁটে যাচ্ছিল। তাকে আমরা সামরা বলে ডাকতাম। নবীজি তার নাম ধরে সামরা, ও সামরা বলে ডাক দিলেন।
ছাগীটি ম্যা ম্যা করতে করতে রাসূলের(সা) কাছে আসলো.। নবীজি বিসমিল্লাহ বলে তার পাশ দিয়ে হাত গলিয়ে ওলান স্পর্শ করলেন। সাথে সাথে ছাগীর ওলান দুধে ভরপুর হয়ে গেল।

নবীজি (সা) আমাকে ডেকে পাত্র আনতে বললেন। পাত্র নিয়ে আসলে তিনি বিসমিল্লাহ বলে দুধ দোহন করলেন। পাত্রটি তখনই ভরে গেল দুধে।

এরপর বললেন, বিসমিল্লাহ বলে তাকে দাও।

আমি মেহমানকে তা দিলাম। তিনি লম্বা এক চুমুক দিয়ে তা থেকে পান করলেন। অতঃপর রেখে দেওয়ার ইচ্ছা করলে নবীজি বললেন, আবারো পান করো। তিনি আবার পান করলেন। এরপর রেখে দেওয়ার ইচ্ছা করলে নবীজি আবার বললেন, আবার পান করো। এভাবে কয়েকবার পান করে তার পেট ভর্তি হয়ে গেল। আল্লাহ যতটুকু চাইলেন মেহমান ততটুকু পান করলেন।

এরপর নবীজি (সা)বিসমিল্লাহ বলে আবার দুধ দোহন করলেন। সাথে সাথে পাত্রটি ভরে গেল। অতঃপর বললেন, এগুলো আয়েশার (রা)কাছে নিয়ে যাও। তারপর যে পরিমাণ সম্ভব সে পরিমাণ সে এখান থেকে পান করে।
নবীজির আদেশ পালনের পর আমি ফিরে এলাম। তিনি আগের মত বিসমিল্লাহ বলে দুধ দোহন করলেন। পাত্র পূর্ণ হল তারপর আমাকে এক এক করে তার প্রত্যেকটি স্ত্রীর নিকট পাঠালেন। যখনই কোনো স্ত্রী পান করতেন বিসমিল্লাহ বলে পুনরায় দুধ দোহন করে আমাকে আরেকজনের কাছে পাঠাতেন। এভাবে একে একে আমাকে তার সকল স্ত্রী কাছে পাঠালেন। সবার কাছ থেকে ফিরে আমি নবীজির কাছে এলাম।

তিনি বললেন আমার দিকে বাটিটি উত্তোলন করো। আমি বাটি উঠালাম। তিনি বিসমিল্লাহ বলে আল্লাহ যতোটুকু চান পান করলেন।
এরপর আমাকে দিলেন আমি পাত্রে ঠোঁট লাগিয়ে পান করলাম। দুধটা মধুর চাইতেও মিষ্টি ছিল, মেশকের চেয়েও সুগন্ধ ছিল।
এরপর নবীজী(সা) বললেন, হে আল্লাহ এই ছাগির মাঝে তার পরিবারের জন্য বরকত দিন।

তথ্যসূত্রঃ কিতাবুশ শারিয়াহ,
যেমন ছিলেন তিনি

About the author